Classification and Statistical Data or Data
বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাশিতথ্য সংগ্রহের পর (যেটি প্রথম অংশে আলোচিত হয়েছে) (Classification and Presentation) সংগ্রহ করা রাশিত নিয়ে পরবর্তী পর্যায় হল ঐ রাশিতথ্যকে এমনভাবে পরিচালনা করা যাতে রাশিতথ্যটি সংক্ষিপ্ত আকারে সহজে বোধগম্য অবস্থায় হাতের কাছে থাকে যা থেকে রাশিতথ্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অতি দ্রুত ধারণা পাওয়া যায় এবং যেটি আবার রাশিতথ্যের অন্যান্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে উপযোগী হয়। সেটি না হলে রাশিতথ্য সংগ্রহের কোনো মূল্য থাকে না। এইজন্যই রাশিতথ্য সংগ্রহের পর এই অধ্যায়ে রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাস ও উপস্থাপন সম্পর্কে আলোচনা করা হল:-
রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাসকরণ বা রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাস (Classification of Data): রাশিতথ্য সংগ্রহ করার পর সেগুলি যাতে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহারের উপযোগী হয় তার জন্য রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাস করা প্রয়োজন। যে পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা রাশিতথ্য একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে সাজানো হয় তাকে রাশিবিজ্ঞানে শ্রেণীবিন্যাস বা শ্রেণী-বিন্যাসকরণ (Classification of Data) বলে।
এই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি বাদ দিয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় যাতে একই ধরনের রাশিতথ্য একটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পৃথক ধরনের রাশিতথ্যগুলি ভিন্নতা (Dissimilarity) অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত হয়। যেমন ভারতে প্রতি দশ বৎসর অন্তর আদমসুমারীর সময় প্রতিটি পরিবারের লোকসংখ্যার হিসাব ছাড়াও অন্যান্য তথ্য যেমন বয়স, লিঙ্গ, জীবিকা, বাসস্থান, ধর্ম ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এখানে বয়স, লিঙ্গ, জীবিকা, বাসস্থান, ধর্ম ইত্যাদির প্রতিটিই সমগ্রকের (দেশের লোকসংখ্যার) এককগুলির বৈশিষ্ট্য। এখানে সমগ্রকের শ্রেণীবিন্যাসগুলি হল :-
(a) বয়স সাপেক্ষে(According to Age) : (i) 0-5 বৎসর, (ii) 6-10 বৎসর, (iii) 11-15 বৎসর ইত্যাদি।
(b) লিঙ্গ সাপেক্ষে (According to Sex) : (i) পুরুষ (Male), (ii) মহিলা (Female)।
(c) জীবিকা কাঠামোর সাপেক্ষে (According to Livelihood Categories) : (i) কৃষিক্ষেত্র (Agrculture), (ii) কৃষিক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্র (Production other than Cultivate), (iii) ব্যবসা বাণিজ্য (Trade and Commerce), (iv) পরিবহন (Transport), (v) অন্যান্য সেবা (Other Services)।
(d) বাসস্থান সাপেক্ষে (According to the place of Residence) : (i) গ্রামাঞ্চল (Rural), (ii) শহরাঞ্চল (Urban)
(e) ধর্ম সাদেক (According to Religion): (1) হিন্দু (Hindu), (ii) মুসলমান (Muslim) ইত্যাদি।
শ্রেণীবিন্যাসের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা (Objectives or Need for Classi-fications) : শ্রেণীবিন্যাসের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা বা উপযোগিতাগুলি হল:-
(১) সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া এবং সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা।
(২) সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের সাদৃশ্য ও পার্থক্যের ক্ষেত্রগুলি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা।
(৩) সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি অতি সহজে বুঝতে সাহায্য করা।
(৪) সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সম্পর্ক পর্যালোচনা করা।
(৫) সংগ্রহ করা রাশিতথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে আসা।
শ্রেণীবিন্যাসের নিয়ম (Rules of Classification) : রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাস মূলত কি উদ্দেশ্যে রাশিতথ্য সংগ্রহ করা হয় তার উপর নির্ভর করলেও অনুসন্ধানের ধরন ও উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নত শ্রেণীবিন্যাসের জন্য কয়েকটি সাধারণ নিয়ম উল্লেখ করা হল:-
(১) শ্রেণীবিন্যাসে শ্রেণীগুলির সংজ্ঞা পরিষ্কার হওয়া উচিত যাতে এই ব্যাপারে কোনো অসচ্ছতা না থাকে।
(২) শ্রেণীবিন্যাস অতি অবশ্যই সম্পূর্ণ (Exhaustive) এবং পরস্পর পৃথক (Mutually Exclusive) হওয়া উচিত। সম্পূর্ণ বলতে সমগ্রকের প্রতিটি রাশিতথ্য একটি না একটি শ্রেণীতে অতি অবশ্যই থাকার অবস্থা বোঝায়। পরস্পর পৃথক বলতে রাশিতথ্যের কোনো মান একটি শ্রেণীতে থাকলে অতি অবশ্যই অন্য কোনো শ্রেণীতে থাকবে না।
(৩) শ্রেণীবিন্যাস স্থায়ী (Stable) হওয়া উচিত অর্থাৎ শ্রেণীবিন্যাসের পদ্ধতি সমগ্র আলোচনায় এবং পরবর্তী অনুসন্ধানেও যাতে অপরিবর্তিত থাকে।
(৪) যে উদ্দেশ্যে রাশিতথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে শ্রেণীবিন্যাস যেন সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
(৫) শ্রেণীবিন্যাস নমনীয় (Flexible) হওয়া উচিত যাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ঘটানো যায়।
শ্রেণীবিন্যাসের প্রকারভেদ (Types of Classification) : সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাস নানাভাবে করা হলেও সাধারণত চারটি পদ্ধতিতে রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাস করা হয় :-
১। গুণের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস (Classification on a Qualitative Basis) : সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি পরিমাপ করা সম্ভব না হলে অর্থাৎ যদি কোনো গাণিতিক সংখ্যা দ্বারা পরিমাপ করা সম্ভব না হয় তাহলে ঐ সমস্ত রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাসকে বলা হয় গুণের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস বা গুণগত শ্রেণীবিন্যাস (Classification on Qualitative Basis) বা গুণবাচক বা গুণনির্দেশক শ্রেণীবিন্যাস (Classification by Attribute)। যেমন কোনো দেশের জনসাধারণের লিঙ্গ, জাতি, পেশা, ধর্ম, মাতৃভাষা ইত্যাদির সাপেক্ষে শ্রেণীবিন্যাস হল গুণের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস।
২। পরিমাপের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস (Classification on a Quantitative Basis) : সংগ্রহ করা রাশিতথ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি পরিমাপ করা সম্ভব হলে অর্থাৎ যদি গাণিতিক সংখ্যার দ্বারা পরিমাপ করা যায়। তাহলে ঐ সমস্ত রাশিতথ্যের শ্রেণীবিন্যাসকে বলা হয় পরিমাপের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস বা পরিমাণগত শ্রেণীবিন্যাস (Classification on Quantitative Basis) বা পরিমাণগত চলক দ্বারা শ্রেণীবিন্যাস (Clas-sification by Variables)। যেমন জনসাধারণের মাসিক আয়, বয়স, উচ্চতা, ওজন, উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংখ্যা, মজুরি ইত্যাদি সাপেক্ষে শ্রেণীবিন্যাস হল পরিমাপের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস।
৩। সময়ের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস (Classification on a Time Basis) : সংগ্রহ করা রাশিতথ্যগুলি যদি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেণীবিন্যাস করা হয় তাহলে ঐ শ্রেণীবিন্যাসকে বলা হয় সময়ের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস (Classification on a Time Basis) বা সময়ানুক্রমিক রাশিতথ্যের (Time Series Data) সময়ভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস বলে। এই পদ্ধতিতে বিন্যাস করা রাশিতথ্যকে বলে কালীন সাৰি (Time Series)। যেমন কোনো উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মাসিক উৎপাদন বা বাৎসরিক উৎপাদন, 1990-এর দশকে প্রতি বৎসের ভারতে আগত পর্যটক, ইত্যাদির সাপেক্ষে শ্রেণীবিন্যাস হল সময়ের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস।
৪। ভৌগোলিক ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস (Classification on a Geographical Basis) : সংগ্রহ বলা হয় ভৌগোলিক ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস বা ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস (Classi-fication)করা রাশিতথ্যগুলি যদি ভৌগোলিক অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেণীবিন্যাস করা হয় তাহলে ঐ শ্রেণীবিন্যাসকে (Classi-fication on a Geographical Basis) বলে। যেমন ভারতে রাজ্যভিত্তিক গড় বৃষ্টিপাত, রাজ্য বা জেলাভিত্তিক সাক্ষরতার হার, রাজ্যভিত্তিক একর প্রতি ধান উৎপাদন ইত্যাদির সাপেক্ষে শ্রেণীবিন্যাস হল। ভৌগোলিক ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস। গুণের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস প্রকৃতপক্ষে সময়ের ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস ও ভৌগোলিক ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাসের অন্তর্গত। তবুও এই দুটি পৃথকভাবে দেখানোর প্রচলিত রীতি আছে।