ক্রেতার আচরণ (Consumer Behavior)

Consumer Behavior

ক্রেতার আচরণ বিশ্লেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল উপযোগ বা উপযোগিতা (Consumer Behavior)। উপযোগ পরিমাপ করা যায় কিনা এই ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। এই মতভেদের ভিত্তিতে ক্রেতার আচরণ বিশ্লেষণে দুটি তত্ত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল মার্শালের উপযোগিতা তত্ত্ব এবং অপরটি হল নিরপেক্ষ রেখার তত্ত্ব। এই অংশে এই দুটি তত্ত্বের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হল।

1. উপযোগ বা উপযোগিতা (Utility)

অর্থনীতিতে উপযোগ বা উপযোগিতা বলতে মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতাকে বোঝায়। যেমন, ঘড়ি সময় দেওয়ার ব্যাপারে যে সাহায্য করে সেই ক্ষমতাই হল ঘড়ির উপযোগিতা। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো দ্রব্য ব্যবহার করলে ভোগকারীর মনে যে তৃপ্তি হয় তাকে উপযোগিতা বলে। সুতরাং উপযোগিতা এক ধরনের মানসিক অনুভূতি।

2. উপযোগিতার পরিমাপ (Measurement of Utility)

অর্থনীতিতে উপযোগিতা দুভাবে পরিমাপের কথা বলে। একটি হল সংখ্যাবাচক পরিমাপ (Cardinal measurement) এবং অপরটি হল ক্রমবাচক পরিমাপ (Ordinal measurement)। সংখ্যাবাচক পরিমাপে বলা হয় উপযোগিতার পরিমাণকে সংখ্যাপতভাবে পরিমাপ করা যায় এবং বিভিন্ন পরিমাণ উপযোগিতাকে যোগ করা যায়।

যেমন, কোনো ব্যক্তি কোনো দ্রব্যের প্রথম একক ভোগ করে যদি 10 একক উপযোগিতা পায় এবং দ্বিতীয় একক ভোগ করে যদি ৪ একক উপযোগিতা পায় তাহলে ঐ দুই একক দণ্য ভোগ করে মোট 18 একক উপযোগিতা পায়। ক্রমবাচক পরিমাপে বলা হয় উপযোগিতা সংখ্যাগতভাবে পরিমাপ করা যায় না, কিন্তু উপযোগিতার স্তর সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। উপযোগিতার স্তর ভোগের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। ভোগ বাড়লে উপযোগিতা বাড়ে, কিন্তু ঠিক কি পরিমাণে বাড়ে তা জানা যায় না। যেমন, কোনো ব্যক্তি একটি রসগোল্লা খেলে যে উপযোগিতা পায়, দুটি রসগোল্লা খেলে তার চেয়ে বেশি উপযোগিতা পায় ঠিকই, কিন্তু কত বেশি উপযোগিতা পায় তা জানা যায় না।


সংখ্যাবাচক উপযোগিতা তত্ত্ব ও ক্রমবাচক উপযোগিতা তত্ত্ব (Cardinal Utility Analysis and Ordinal Utility Analysis )


সংখ্যাবাচক উপযোগিতা তত্ত্ব ও ক্রমবাচক উপযোগিতা তত্ত্বের মূল পার্থক্যগুলি হল–

(ক) সংখ্যাবাচক উপযোগিতা তত্ত্বে উপযোগিতার পরিমাণ জানা যায়, অপরপক্ষে ক্রমবাচক উপযোগিতার তত্ত্বে উপযোগিতার পরিমাণ জানা যায় না। কিন্তু উপযোগিতার স্তর জানা যায়।
(খ) সংখ্যাবাচক উপযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপযোগিতার মধ্যে পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করা হয়, কিন্তু ক্রমবাচক উপযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপযোগিতার স্তরের ভিত্তিতে ভুললা করা হয়। অধ্যাপক মার্শালের (Marshall) মতে উপযোগিতা সংখ্যাবাচক, অর্থাৎ উপযোগিতার পরিমাণকে সংখ্যাগতভাবে পরিমাপ করা যায়৷ সেইজন্য অধ্যাপক মার্শালের উপযোগিতার তত্ত্বটি সংখ্যাবাচক পরিমাপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। ক্রেতার আচরণ বিশ্লেষণের জন্য যে সমস্ত তত্ত্ব অর্থনীতিতে রয়েছে তার মধ্যে অ্যাপক মার্শালের উপযোগিতা তত্ত্বটি একটি প্রাচীন তত্ত্ব। অপ্রদিকে অধ্যাপক হিরুস্ (Hicks), অ্যালেন (Allen) প্রমুখ অর্থনীতিবিদদের মতে উপযোগিতা ক্রমবাচক। সেইজন্য হিকস্, অ্যালেন প্রমুখ অর্থনীতিবিদদের নিরপেক্ষ রেখার তত্ত্বটি ক্রমবাচক পরিমাপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।


● সংখ্যাবাচক উপযোগিতা বিশ্লেষণ : মার্শালের উপযোগিতা তত্ত্ব (Cardinal Utility Analysis :
Marshallian Utility Approach): অধ্যাপক মার্শালের মতে উপযোগিতা সংখ্যাবাচক, সেইজন্য অধ্যাপক মার্শালের উপযোগিতা তত্ত্বটি সংখ্যাবাচক পরিমাপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
● মোট উপযোগিতা ও প্রান্তিক উপযোগিতা (Total Utility and Marginal Utility) : অধ্যাপক মার্শালের মতে কোনো দ্রব্যের উপযোগিতা অর্থের অঙ্কে প্রকাশ করা যায়। এর জন্য অনুমান করা হয় এক একক অর্থের উপযোগিতা স্থির আছে।

একজন ভোগকারী বা ক্রেতা দ্রব্যটির নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোগ করে যে উপযোগিতা পায়, তাকে বলে মোট উপযোপিতা। অর্থাৎ মোট উপযোগিতা হল দ্রব্যটির বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগিতার যোগফল৷ কোনো দ্রব্যের অতিরিক্ত এক একক ভোগ করলে যে পরিমাণ অতিরিক্ত উপযোগিতা পাওয়া যায়, তাকে বলে প্রান্তিক উপযোগিতা। মোট উপযোগিতা ও প্রান্তিক উপযোগিতা নীচের তালিকায় দেখানো হল।

Leave a Comment