Cost Analysis, Different Concepts of Cost ব্যয়ের বিভিন্ন ধারণা

Cost Analysis, Different Concepts of Cost

উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম বিভিন্ন উপাদান নিয়োগ করে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে (Cost Analysis)। দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ফার্মের যে ব্যয় হয় তাকে বলে উৎপাদন ব্যয় বা ব্যয়। উৎপাদন ব্যয় সংক্রান্ত তত্ত্বকেই বলা হয় ব্যয় তত্ত্ব। বিভিন্ন ধরনের ব্যয় তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করাই হল এই অংশের বিষয়বস্তু।

ব্যয় বিশ্লেষণ-ব্যয়ের বিভিন্ন ধারণা ( Cost Analysis— Different Concepts of Cost) : দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করার জন্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম বিভিন্ন উপাদান নিয়োগ করে। ফার্ম দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য যে সমস্ত উপাদান নিয়োগ করে সেই সমস্ত উপাদানের ব্যয়ের সমষ্টি হল উৎপাদন ব্যয়। অর্থাৎ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করার জন্য যে ব্যয় হয় তাকে বলে উৎপাদন ব্যয় বা ব্যয় (Cost of Production)। অর্থনীতিতে ব্যয়ের বিভিন্ন ধারণা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধারণাগুলি বিশ্লেষণ করা

আর্থিক উৎপাদন ব্যয়—অর্থনৈতিক ব্যয় (Money Cost of Production – Economic Cost) : দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করার জন্য যে ব্যয় হয়, তাকে উৎপাদন ব্যয় বলে। উৎপাদন ব্যয়কে অর্থের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে, তাকে বলে আর্থিক উৎপাদন ব্যয় বা অর্থনৈতিক ব্যয়। উৎপাদক যখন কোনো দ্রব্য উৎপাদন করে তখন তাকে ঐ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন উপাদান নিয়োগ করতে হয়। সেই সমস্ত উপাদানের জন্য উৎপাদককে যে অর্থ ব্যয় করতে হয় সেটাই হল আর্থিক উৎপাদন ব্যয়। আর্থিক উৎপাদন ব্যয় বা অর্থনৈতিক ব্যয়কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল প্রকাশ্য ব্যয় বা বাহ্যিক ব্যয় বা সুস্পষ্ট ব্যয় (Explicit Cost) এবং অপরটি হল অপ্রকাশ্য ব্যয় বা অন্তর্নিহিত ব্যয় (Implicit Cost)।

দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ফার্ম যে সমস্ত উপাদান বাইরে থেকে সংগ্রহ করে তার জন্য ফার্মের যে ব্যয় হয়, তাকে বলে প্রকাশ্য ব্যয় বা বাহ্যিক ব্যয় বা সুস্পষ্ট ব্যয়। অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক ব্যয়ই হল প্রকাশ্য ব্যয়, যেমন শ্রমিকের মজুরি, ঋণের জন্য প্রদত্ত সুদ, বাড়ি বা জমির খাজনা ইত্যাদি। অপবসক্ষে দ্রসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ফার্ম যে সমস্ত উপাদান বাইরে থেকে সংগ্রহ করে না, কিন্তু এগুলো না থাকলে বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হতো, সেই সমস্ত উপাদানের উপর আরোপিত ব্যয়কে (Imputed Cost) বলে অপ্রকাশ্য ব্যয় বা অন্তর্নিহিত ব্যয় (Implicit)।

অর্থাৎ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের কাজে উদ্যোক্তার নিজের মালিকানাধীন যে সমস্ত উপাদান ব্যবহার করা হয়, তার উপর আরোপিত ব্যয়ই হল অপ্রকাশ্য বায়। যেমন দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তা অনেক সময় নিজের জমি, নিজের মূলধন এবং নিজের শ্রম কাজে লাগায়। কিন্তু এগুলোর জন্য উদ্যোক্তাকে কোনো আর্থিক ব্যয় বহন করতে হয় না। অথচ এগুলি যদি অপরের উৎপাদন ক্ষেত্রে নিয়োগ করতো তাহলে যে অর্থ উপার্জন করতে পারতো তাকেই বলা হয় আরোপিত ব্যয়। একটি বিশেষ ধরনের আরোপিত ব্যয় হল স্বাভাবিক মুনাফা। উদ্যোক্তা উৎপাদন কাজ পরিচালনার জন্য যে সর্বনিম্ন অর্থ প্রত্যাশা করে, তাকে বলে স্বাভাবিক মুনাফা। সুতরাং বলা যায় সমস্ত প্রকার আরোপিত ব্যয়ের সমষ্টিই হল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের অপ্রকাশ্য ব্যয়।এখানে উল্লেখ করা যায় যে, অর্থনীতিবিদদের কাছে আর্থিক উৎপাদন ব্যয় হল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ব্যয়ের যোগফল, কিন্তু হিসাবরক্ষকদের কাছে আর্থিক উৎপাদন ব্যয় হল ওধুমাত্র প্রকাশ্য ব্যয়, যেগুলি ফার্মের হিসাব বইতে উল্লেখ থাকে।

হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয় (Accounting Cost) : দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ফার্ম বা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান যে সমস্ত উপাদান বাইরে থেকে সংগ্রহ করে তার জন্য ফার্মের যে ব্যয় হয় তাকে বলে প্রকাশ্য ব্যয় বা বাহ্যিক ব্যয় বা সুস্পষ্ট ব্যয়। অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক ব্যয়ই হল প্রকাশ্য ব্যয়। যেমন শ্রমিকের মজুরি, ঋণের জন্য প্রদত্ত সুদ, বাড়ি বা জমির খাজনা ইত্যাদি। এই প্রকাশ্য ব্যয়ের যোগফলই হল হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয়। হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয়ের মধ্যে কিন্তু অপ্রকাশ্য ব্যয় যুক্ত করা হয় না। দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ফার্ম যে সমস্ত উপাদান বাইরে থেকে সংগ্রহ করে না কিন্তু এগুলো না থাকলে বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হত সেই সমস্ত উপাদানের উপর আরোপিত ব্যয়কে অপ্রকাশ্য ব্যয় বলা হয়। অর্থাৎ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের কাজে উদ্যোক্তার নিজের মালিকানাধীন যে সমস্ত উপাদান ব্যবহার করা হয় তার উপর আরোপিত ব্যয়ই হল অপ্রকাশ্য ব্যয়।

সুতরাং আর্থিক ব্যয় হল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ব্যয়ের যোগফল কিন্তু হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয় হল শুধুমাত্র প্রকাশ্য ব্যয়, যেগুলি ফার্মের হিসাব বইতে লিপিবদ্ধ থাকে।

আর্থিক উৎপাদন ব্যয় বনাম হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয় (Money Cost of Production vs. Accounting Cost) : আর্থিক উৎপাদন ব্যয় হল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ব্যয়ের যোগফল। অপরপক্ষে হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয় হল শুধুমাত্র প্রকাশ্য ব্যয়, যেগুলি ফার্মের হিসাব বইতে উল্লেখ থাকে। আর্থিক উৎপাদন ব্যয় ও হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয়ের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি হল—

(১) আর্থিক উৎপাদন ব্যয় ব্যবস্থাপকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। অপরপক্ষে হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
(২) যন্ত্রের অবমূল্যায়ন নির্ধারণের ক্ষেত্রে আর্থিক উৎপাদন ব্যয় ও হিসাবশাস্ত্রীয় ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকে। হিসাবপরীক্ষক সরল রৈখিক উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে অর্থাৎ হিসাবরক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্ধারিত জীবনকালের শেষে যন্ত্র ব্যবহারজনিত ব্যয় শূন্য হয়ে থাকে, কিন্তু অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে অনুধাবন করা যেতে পারে যে, যন্ত্রটি আরও এক বৎসর ব্যবহার করা যাবে বা যন্ত্রটির নির্ধারিত জীবনকালের পর প্রতিষ্ঠানটি পুরানো যন্ত্রটি একটি দামে বিক্রয় করতে পারে।
(৩) ব্যয়-উৎপাদন এর সম্পর্ক হিসাবশাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির থেকে আলাদা হয়ে থাকে। হিসাবশাস্ত্রে ধরা হয় যে, মোট ব্যয় রেখা সরল রৈখিক, কিন্তু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি সকল সময়ই সরল রৈখিক নয়৷

Leave a Comment