অর্থনৈতিক শব্দসমূহ (Economic Terms)

Economic Terms

1. উপযোগিতা বা উপযোগ (Utility)

অর্থনীতিতে উপযোগিতা বলতে মানুষের অভাব মোচনের ক্ষমতাকে বোঝায় (Economic Terms)। যেমন, ঘড়ি ব্যবহার করে উপযোগিতা পাওয়া যায়, কিন্তু ঘড়িকেই উপযোগিতা বলা যায় না, ঘড়ি সময় দেওয়ার ব্যাপারে যে সাহায্য করে, সেই ক্ষমতাই হল ঘড়ির উপযোগিতা। উপযোগিতা পাঁচ প্রকারের হয়।

(ক) স্বাভাবিক উপযোগিতা (Natural utility) : প্রকৃতির কাছ থেকে যে উপযোগিতা সরাসরি পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় স্বাভাবিক উপযোগিতা। যেমন, সূর্যের আলো, বাতাস ইত্যাদি।

(খ) রূপগত উপযোগিতা (Transforming utility) : কোনো বস্তুর নতুন রূপ দেওয়ার ফলে যে উপযোগিতা সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় রূপগত উপযোগিতা। যেমন, কাদামাটি থেকে পুতুল, বনের কাঠ থেকে চেয়ার ও টেবিল ইত্যাদি।

(গ) স্থানগত উপযোগিতা (Place utility) : কোনো বস্তু একস্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর জন্যযে উপযোগিতা সৃষ্টি হয়, তাকে স্থানগত উপযোগিতা বলে। যেমন, কাশ্মীরের শাল কলকাতায় এনে উপযোগিতা বাড়ানো হয়।

(ঘ) সময়গত উপযোগিতা বা কালগত উপযোগিতা (Time utility) : কোনো নির্দিষ্ট সময়ে যে উপযোগিতা সৃষ্টি করে মানুষের অভাব মেটানো হয়, তাকে সময়গত উপযোগিতা বা কালগত উপযোগিতা বলে। যেমন, শীতকালে উলের পোশাক পরিচ্ছদ, বর্ষাকালে ছাতা ইত্যাদি।

(ঙ) সেবাগত উপযোগিতা (Service utility) : অবস্তুগত দ্রব্যের অভাব মেটানোর ক্ষমতাকে সেবাগত উপযোগিতা বলে। যেমন, শিক্ষকের শিক্ষাদান, চিকিৎসকের চিকিৎসা ইত্যাদি।

2. অভাব (Wants)

অর্থনীতিতে অভাব বলতে প্রয়োজনীয় বা আরামদায়ক কোনো দ্রব্য পাওয়ার আকাঙক্ষাকে বোঝায়। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য বা বিলাসের জন্য কতকগুলি দ্রব্য বা সেব কার্যের প্রয়োজন। এই সমস্ত
দ্রব্য ও সেবাকার্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকেই অভাব বলে। অভাবকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় –

(ক) প্রয়োজনীয় অভাব (Necessaries): যে সমস্ত অভাব পূরণ না হলে জীবনধারণ সম্ভব নয়, তাকে প্রয়োজনীয় অভাব বলে। যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি।

(খ) আরামপ্রদ দ্রব্যের অভাব (Comforts ) : যে সমস্ত দ্রব্য জীবনধারণের জন্য প্রয়োজন নয়, কিন্তু সেগুলি জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ায়, তাদের আরামপ্রদ দ্রব্য বলে এবং এই সমস্ত দ্রব্যের জন্য অভাবকে আরামপ্রদ দ্রব্যের অভাব বলে। যেমন, গদিওয়ালা চেয়ার।

(গ) বিলাস দ্রব্যাদির অভাব (Luxuries): সমাব্জে আড়ম্বর দেখানোর জন্য যে সমস্ত দ্রব্যের অভাব অনুভূত হয়, তাদের বলে বিলাস দ্রব্যাদির অভাব। যেমন, দামী গাড়ি।

3. ঐব্য ও সেবা (Goods and services)

যা কিছু মানুষের অভাব মেটাতে পারে, তাকে অর্থনীতির দ্রব্য সাধারণত দুই প্রকারের হয়। একটি হল বস্তুগত দ্রব্য (Material goods) এবং অপরটি। হল অবগত দ্রব্য (Nonnaterial Gods)। যে সমস্ত প্রব্যের বস্তুগত রূপ আছে, যা চোখে দেখা যায়, তাকে বঙগত দ্রব্য বলে। যেমন, খাদ্যদ্রব্য, কলম ইত্যাদি।অবস্তুগত দ্রব্য হল সেগুলি, যার কোনো নির্দিষ্ট বস্তুগত রূপ নেই। এই অবস্তুগত দ্রব্যকেই বলে সেবা। যেমন, শিক্ষকের শিক্ষকতা, ব্যবসার সুনাম ইত্যাদি। ব্যবহারের দিক থেকে দ্রব্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়

(ক) ভোগ্য দ্রব্য (Consumer goods ) : যে সমস্ত দ্রব্য সরাসরি মানুষের ভোগে ব্যবহৃত হয়, তাদের ভোগ্য দ্রব্য বলে। যেমন, চাল, ডাল ইত্যাদি।

(খ) মূলধনী দ্রব্য (Capital goods): যে সমস্ত দ্রব্য সরাসরি মানুষের ভোগে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য দ্রব্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়, তাকে মূলধনী দ্রব্য বলে। যেমন, যন্ত্রপাতি, কাচামাল ইত্যাদি।

4. ভোগ ও ভোগকারী (Consumption and Consumer)

দ্রব্যের মধ্যে যে উপযোগিতা থাকে ভোগের মাধ্যমে সেই উপযোগিতা নষ্ট হয়। সুতরাং দ্রব্যের উপযোগিতা নিঃশেষ করাকেই ভোগ বলে। কোনো কোনো দ্রব্য কেবলমাত্র একবার ব্যবহার করা হলে তার উপযোগিতা নিঃশেষ হয়ে যায়। যেমন আপেল বা আনারস একবার খেলেই তা শেষ হয়ে যায়। আবার কতকগুলি ক্ষেত্রে দ্রব্যটি একবার ব্যবহারে শেষ হয় না। দ্রব্যটি বহুবার ব্যবহার করা যায়। এই সকল ক্ষেত্রে উপযোগিতার নিঃশেষ ধীরে ধীরে হয়ে থাকে, যেমন, জামাকাপড় একবার ব্যবহার করলে নষ্ট হয় না, বহুবার ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। যে ব্যক্তি ভোগ করে, তাকে ভোগকারী বলে। ভোগকারীর অভাব সীমাহীন, কিন্তু তার আয় সীমিত। সেইজন্য প্রতিটি ভোগকারীকে নির্বাচন করতে হয় কোন অভাব আগে মেটাবে এবং কোন অভাব পরে মেটাবে।

5. সম্পদ (Wealth)

যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে, যার যোগান চাহিদার তুলনায় কম এবং অর্থের
বিনিময়ে কেনাবেচা করা যায়, তাদের সম্পদ বলে। অর্থনীতিতে কোনো দ্রব্যকে তখনই সম্পদ বলা হবে, যখন নিম্নলিখিত চারটি বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকবে।

(ক) উপযোগিতা (Utility) : দ্রব্যটির অভাব পূরণ করার ক্ষমতা বা উপযোগিতা থাকবে।
(খ) অ’ বা দুষ্প্রাপ্যতা (Scarcity) : দ্রব্যটির যোগান চাহিদার তুলনায় কম থাকবে।
(গ) হস্তান্তরযোগ্যতা (Transferability) : দ্রব্যটি হস্তান্তরযোগ্য হবে। হস্তান্তর বলতে এখানে একট মালিকানার হস্তান্তরকেই বোঝানো হয়।
(ঘ) বাহ্যিকতা (Externality) : দ্রব্যটির বাহ্যিক অবস্থান থাকবে, অর্থাৎ দ্রব্যটি চোখে দেখা যাবে এবং সামটি কানেও শোনা যাবে। সম্পদের বর্ণনা অনুসারে ঘরবাড়ি, শেয়ার, পুস্তক, ধাতব মুদ্রা, ব্যবসায়ের সুনাম, বই রচনার স্বত্ব, রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থ ইত্যাদি হল সম্পদ৷ কিন্তু আলো, বাতাস, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য প্রতিভা, পরীক্ষার সার্টিফিকেট ভার ইত্যাদিকে সম্পদ বলা যায় না। কারণ এদের মধ্যে উপরি উক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য নেই।

6. মূল্য ও দাম (Value and Price)

অর্থনীতিতে মূল্য শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহার করা হয়। একটি হল ব্যবহারিক মূল্য (value in use) এবং অপরটি হল বিনিময় মূল্য (value in exchange)। দ্রব্য ব্যবহার করে ব্যবহারকারী যে উপযোগিতা বা তৃপ্তি পায়, তাকে ঐ দ্রব্যের ব্যবহারিক মূল্য বলে। ব্যবহারিক মূল্য হল একটি ব্যক্তিগত ধারণা। কোনো দ্রব্যের এক এককের বিনিময়ে অন্য দ্ৰব্য যত একক পাওয়া যায়, তাকেই বলে প্রথম দ্রব্যের বিনিময় মূল্য। যেমন 1 কেজি ধানের বদলে যদি 2 কেজি গম পাওয়া যায়, তাহলে 1 কেজি ধানের বিনিময় মূল্য হল 2 কেজি গম। অপরদিকে। 1 কেজি গমের বিনিময় মূল্য হল । কেজি ধান। এইভাবে যে কোনো দুটি দ্রব্যের মধ্যে বিনিময় মূল্য পাওয়া যায়। এই বিনিময় মূল্যকেই সাধারণ অর্থে মূল্য বলা হয়। দ্রব্যের বিনিময় মূল্য অর্থের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তাকে দাম বলে। অর্থাৎ কোনো দ্রব্যের সাথে অর্থের বিনিময় হলে ঐ বিনিময় হারকে ঐ দ্রব্যের দাম বলে। যেমন, 1 কেজি চাল = 20 টাকা।

Leave a Comment