দাম প্রভাব, আয় প্রভাব ও পরিবর্ত প্রভাবের বিভাজন

Income Effect and Substitution

ক্রেতা তার সমগ্র আয় দুটি দ্রব্যের জন্য ব্যয় করে বলে ধরা হচ্ছে। দ্রব্য দুটির দাম স্থির অবস্থায় ক্রেতার আয়ের পরিবর্তনের ফলে ক্রেতার চাহিদার যে পরিবর্তন দেখা যায়, তাকে আয় প্রভাব বলে। আবার ক্রেতার প্রকৃত আয় বা ক্রয়ক্ষমতা একই অবস্থায় শুধুমাত্র আপেক্ষিক দামের পরিবর্তনের জন্য দ্রব্যের চাহিদার উপর যে প্রভাব পড়ে, তাকে পরিবর্ত প্রভাব বলে। Income Effect and Substitution

আবার ক্রেতার আয় ও একটি দ্রব্যের দাম স্থির অবস্থায় অন্য দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের ফলে দ্রব্য দুটির চাহিদার উপর যে প্রভাব পড়ে, তাকে দাম প্রভাব বলে।

দাম প্রভাব হল পরিবর্ত প্রভাব ও আয় প্রভাবের মিলিত ফল। কোনো দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের ফলে দাম প্রভাবের জন্য ক্রেতার ভারসাম্যের পরিবর্তন হয়। ভারসাম্যের পরিবর্তনের জন্য দুটি প্রভাব কাজ করে।

প্রথমত, কোনো একটি দ্রব্যের দাম কমে গেলে, সেই দ্রব্যটি অন্য দ্রব্যের তুলনায় সস্তা হয়ে যায়। ফলে ক্রেতা অপর দ্রব্যের চাহিদা কমিয়ে তার পরিবর্তে এই দ্রব্যটি বেশি পরিমাণ ব্যবহার করে। একেই বলে পরিবর্ত প্রভাব।

দ্বিতীয়ত, একটি দ্রব্যের দাম কমে গেলে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা বা প্রকৃত আয় বেড়ে যায়। অর্থাৎ দাম কমে গেলে একই পরিমাণ দ্রব্য কেনার পর ক্রেতার হাতে কিছু অর্থ থেকে যায়। এই বাড়তি অর্থ দিয়ে ক্রেতা দ্রব্যটির চাহিদার পরিমাণ বাড়ায় (স্বাভাবিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে) বা কমায় (নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে)। একেই বলে আয় প্রভাব।

সুতরাং দাম প্রভাব হল পারবত প্রভাব ও আর প্রভাবের দাম প্রভাবের ফলে দ্রব্যের চাহিদার উপর কি প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করে দ্রব্যের প্রকৃতির উপর। বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম প্রভাব আলোচনা করা হচ্ছে।

(1) স্বাভাবিক দ্রব্য (Normal goods )

দ্রব্যটি যদি স্বাভাবিক দ্রব্য হয়, তাহলে দাম কমার ফলে আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা বাড়বে। কারণ স্বাভাবিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে আয় প্রভাব ধনাত্মক। অপর পক্ষে দাম কমার ফলে পরিবর্ত প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা সবসময়ই বাড়ে। সুতরাং আয় প্রভাব ও পরিবর্ত প্রভাবের জন্য স্বাভাবিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমলে দ্রব্যটির চাহিদা বাড়বে অর্থাৎ চাহিদার নিয়ম কাজ করবে।

(2) নিকৃষ্ট দ্রব্য (Inferior goods)

দ্রব্যটি যদি নিকৃষ্ট দ্রব্য হয়, তাহলে দাম কমার ফলে আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা কমবে। কারণ নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে আয় প্রভাব ঋণাত্মক। অপর পক্ষে দাম কমার ফলে পরিবর্ত প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা সব সময়ই বাড়ে। সুতরাং আয় প্রভাব ও পরিবর্ত প্রভাবের জন্য নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ কি হবে তা নির্ভর করে আয় প্রভাব ও পরিবর্ত প্রভাবের ক্ষমতার উপর। বিষয়গুলি নীচে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

(3) অ-গিযেন নিকৃষ্ট দ্রব্য

নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে ঋণাত্মক আয় প্রভাব যদি পরিবর্ত প্রভাব অপেক্ষা কম শক্তিশালী হয়, তাহলে তাকে অ-গিফেন নিকৃষ্ট দ্রব্য বলে। অ-গিফেন নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমার ফলে দ্রব্যটির চাহিদা বাড়বে। কারণ দাম কমার ফলে ঋণাত্মক আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা যতটা কমবে, পরিবর্ত প্রভাবের জন্য চাহিদা তা অপেক্ষা বেশি বাড়বে। ফলে স্বাভাবিক দ্রব্যের মতোই দাম কমলে দাম প্রভাবে দ্রব্যটির চাহিদা বাড়বে। কিন্তু স্বাভাবিক দ্রব্যের চেয়ে কম পরিমাণ বাড়বে।

(খ) গিফেন দ্রব্য (Giffen goods )

নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে ঋণাত্মক আয় প্রভাব যদি পরিবর্ত প্রভাব অপেক্ষা বেশি শক্তিশালী হয়, তাহলে তাকে গিফেন দ্রব্য বলে। গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কমার ফলে দ্রব্যটির চাহিদা কমে। কারণ দাম কমার ফলে ঋণাত্মক আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা যতটা কমবে, পরিবর্ত প্রভাবের জন্য চাহিদা তা অপেক্ষা কম বাড়বে। ফলে দাম কমলে দাম প্রভাবে দ্রব্যটির চাহিদা কমবে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ঋণাত্মক আয় প্রভাব এবং পরিবর্ত প্রভাব সমান শক্তিশালী হলে দাম কমার ফলে দ্রব্যটির চাহিদা অপরিবর্তিত থাকবে। পরিবর্ত প্রভাবের কারণ দাম কমার ফলে ঋণাত্মক আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা যতটা কমবে, জন্য দ্রব্যটির চাহিদা ঠিক একই পরিমাণ বাড়বে। ফলে দাম কমলে দাম প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদার কোনো পরিবর্তন হবে না।

নিকৃষ্ট দ্রব্য ও গিফেন দ্রব্য (Inferior Goods and Giffen Goods)

নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে ক্রেতার আয় বাড়লে প্রব্যের চাহিদা কমে, তাই নিকৃষ্ট দ্রব্যের ক্ষেত্রে আয় প্রভাব ঋণাত্মক। নিকৃষ্ট দ্রব্যের দাম কমলে যে দাম প্রভাবের সৃষ্টি হয়, সেটি আয় প্রভাব ও পরিবর্ত প্রভাবের মিলিত ফল। নিকৃষ্ট দ্রব্যের দাম কমলে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা বা প্রকৃত আয় বেড়ে যায়, অর্থাৎ দাম কমে গেলে একই পরিমাণ দ্রব্য কেনার পর ক্রেতার হাতে কিছু অর্থ থেকে যায়। কিন্তু দ্রব্যটি নিকৃষ্ট দ্রব্য হওয়ার জন্য ক্রেতার হাতে বাড়তি অর্থ থাকা সত্ত্বেও দ্রব্যটির চাহিদা কমায়। একেই বলে আয় প্রভাব। তাই নিকৃষ্ট দ্রব্যের দাম কমার ফলে আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যটির চাহিদা কমে।

Leave a Comment