Law of Demand চাহিদার নিয়ম বা চাহিদার সূত্র

Law of Demand

অধ্যাপক মার্শাল প্রথম চাহিদার নিয়ম বিশ্লেষণ করেন। (Law of Demand) এই নিয়মে কোনো একটি দ্রব্যের দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে সেই সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ক্রেতার আয়, সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের দাম, ক্রেতার রুচি ও পছন্দ, সময় ইত্যাদি বিষয় স্থির অবস্থায় কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে ও দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। অর্থাৎ অন্যান্য বিষয় স্থির অবস্থায় কোনো দ্রব্যের দাম ও সেই দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণের মধ্যে যে বিপরীত সম্পর্ক থাকে, তাকেই বলা হয় চাহিদার নিয়ম বা চাহিদার সূত্র।

(ক) ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগিতার নিয়ম :

অধ্যাপক মার্শাল কোনো দ্রব্যের চাহিদা রেখা কেন নিম্নমুখী হয়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগিতার নিয়মের দ্বারা। ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগিতার নিয়মে বলা হয়, অন্যান্য সমস্ত কিছু স্থির অবস্থায় কোনো ক্রেতা কোনো একটি দ্রব্য ক্রমাগত ভোগ করতে থাকলে সেই দ্রব্যটির বিভিন্ন একক থেকে প্রান্তিক উপযোগিতা ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে। অধ্যাপক মার্শালের মতে কোনো এককের প্রান্তিক উপযোগিতা যত কম হবে, ক্রেতা সেই এককের জন্য তত কম দাম দিতে রাজি থাকবে। ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী দ্রব্যটির ভোগ ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকলে, বিভিন্ন এককের প্রান্তিক উপযোগিতা কমছে বলেই ক্রেতা অতিরিক্ত এককের জন্য কম দাম দিতে রাজি থাকে।

সেই জন্যই বেশি চাহিদা হতে হলে দাম কম হওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ দাম কম হলে তবেই চাহিদা বেশি হবে এবং দাম বেশি হলে চাহিদা কম হবে। সুতরাং ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগিতার নিয়মের জন্য চাহিদার নিয়ম কার্যকর হয়, অর্থাৎ চাহিদা রেখা নিম্নমুখী হয়।

খ) আয় প্রভাব :

অন্যান্য সমস্ত কিছু স্থির অবস্থায় যদি একটি দ্রব্যের দাম কমে, তাহলে ক্রেতার প্রকৃত আয় বাড়ে। কারণ ক্রেতা দাম কমার আগে যে পরিমাণ দ্রব্য কিনতো সেই পরিমাণ দ্রব্য কেনার পরেও ক্রেতার হাতে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে৷ এই উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে ক্রেতা যে পরিমাণ দ্রব্য কেনে তাকে আয় প্রভাব বলে। দ্রব্যটি যদি স্বাভাবিক দ্রব্য (Normal goods) হয়, তাহলে আয় প্রভাবের জন্য দ্রব্যের দাম কমার ফলে দ্রব্যটির চাহিদা বাড়বে। সুতরাং আয় প্রভাবের জন্য চাহিদার নিয়ম কার্যকর হয়, অর্থাৎ চাহিদা রেখা নিম্নমুখী হয়।

ধরা যাক, চালের দাম যখন প্রতি কিলো 10 টাকা ছিল, ক্রেতা তখন 10 কিলো চাল কিনতো। ফলে চালের জন্য ক্রেতার খরচ হতো 100 টাকা। যদি চালের দাম কমে প্রতি কিলো ৪ টাকা হয়, তাহলে ক্রেতা যদি আগের মতো 10 কিলো চাল কেনে, তাহলে ক্রেতার চালের জন্য খরচ হবে ৪০ টাকা। ফলে একই পরিমাণ চাল কেনার পরেও ক্রেতার পকেটে (100 টাকা – 80 টাকা) 20 টাকা থাকবে। এই উদ্বৃত্ত 20 টাকার সাহায্যে আরও বেশি পরিমাণ চাল কিনতে পারবে। সুতরাং আয় প্রভাব হল দ্রব্যের দাসের পরিবর্তনের ফলে ক্রেতার প্রকৃত আয়ের পরিবর্তন ও তার ফলে দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তন।

(গ) পরিবর্ত প্রভাব :

কোনো দ্রব্যের দাম কমলে ঐ দ্রব্যের আপেক্ষিক দাম কমে, ফলে অপেক্ষাকৃত বেশি দামের পরিবর্ত দ্রব্যের পরিবর্তে ক্রেতা ঐ দ্রব্যটি বেশি পরিমাণে কিনতে থাকে। আবার কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে ঐ দ্রব্যের আপেক্ষিক দাম বাড়ে। ফলে অপেক্ষাকৃত কম দামের পরিবর্ত দ্রব্য ক্রেতা বেশি পরিমাণে কেনে। ফলে যে দ্রব্যের দাম বাড়ে সেই দ্রব্যের চাহিদা কমে। একেই বলা যায় পরিবর্ত প্রভাব। পরিবর্ত প্রভাবের জন্য চাহিদার নিয়ম কার্যকর হয়, অর্থাৎ চাহিদা রেখা নিম্নমুখী হয়। পরিবর্ত প্রভাবের ফলে যে দ্রব্যের আপেক্ষিক দাম কমে, সেই দ্রব্যের চাহিদা সব সময়েই বাড়ে।

সুতরাংদিন আছে। যে ভে প্রভাবের ফলে যে দ্রব্যের আশোক পাল পরিবর্ত প্রভাবের জন্য চাহিদার নিয়ম কার্যকর হয়, অর্থাৎ চাহিদা রেখা নিম্নমুখী হয়। ধরা যাক, কফির দাম কমছে কিন্তু চায়ের দাম স্থির আছে৷ ফলে চায়ের তুলনায় কফির আপেক্ষিক দাম কমছে, এই অবস্থায় ক্রেতা চায়ের পরিবর্তে কফি বেশি পরিমাণে কিনবে। অপরপক্ষে কফির দাম বেড়ে গেলে ক্রেতা কফির পরিবর্তে চা বেশি পরিমাণে কিনবে। সুতরাং পরিবর্ত প্রভাব হল অন্যান্য সমস্ত কিছু স্থির অবস্থায় কোনো দ্রব্যের আপেক্ষিক দামের পরিবর্তনের জন্য চাহিদার পরিবর্তন।

(ঘ) ক্রেতার সংখ্যার পরিবর্তন :

অধ্যাপক স্যামুয়েলসনের (Prof. Samuelson) মতে দ্রব্যের দাম কমলে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। কারণ দ্রব্যের দাম কমার ফলে যে সমস্ত ক্রেতারা আগে দ্রব্যটি কিনতে পারতো না, তারা কিনতে শুরু করে। ফলে দ্রব্যটির মোট চাহিদা বাড়ে। অপরপক্ষে দ্রব্যের দাম বাড়লে কোনো কোনো ক্রেতা দ্রব্যটি আর কিনতে পারে না, ফলে দ্রব্যটির মোট চাহিদা কমে। এই সমস্ত ক্রেতাকে বলা হয় প্রান্তিক ক্রেতা। সুতরাং প্রান্তিক ক্রেতাদের জন্য চাহিদার নিয়ম কার্যকর হয়, অর্থাৎ চাহিদা রেখা নিম্নমুখী হয়।

যেমন, কলকাতায় যখন টেলিভিশন নতুন চালু হয়, তখন দাম খুব বেশি ছিল। ফলে খুব কম সংখ্যক ক্রেতা টেলিভিশন কিনেছিল। পরে টেলিভিশনের দাম কম হওয়ার ফলে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে এবং টেলিভিশনের চাহিদাও বেড়েছে।

(ঙ) দ্রব্যের ব্যবহারের পরিবর্তন:

কোনো দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের ফলে ব্যবহারের পরিবর্তন হওয়ার জন্য চাহিদার পরিবর্তন ঘটে থাকে। ফলে চাহিদার নিয়ম কার্যকর হয়, অর্থাৎ চাহিদা রেখা নিম্নমুখী হয়। যেমন, বিদ্যুতের দাম কমলে বিদ্যুৎ কম প্রয়োজনীয় কাজে (যেমন, হিটার বা ইস্ত্রির জন্য) ব্যবহার করা হয়। ফলে ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ে বলে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ে (Law of Demand)। আবার বর্তমানে প্লাস্টিকের দাম কম হওয়ার জন্য ব্যবহারিক জীবনের নানা কাজে প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে, ফলে প্লাস্টিকের চাহিদা বাড়ছে।

Leave a Comment