Nature and Scope of Economics অর্থনীতির প্রকৃতি ও পরিধি

Nature and Scope of Economics

প্রত্যেক শাস্ত্রেরই প্রকৃতি ও পরিধি বর্তমান। প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে সেই শাস্ত্র সম্পর্কে অধ্যয়ন সম্ভব নয়। অর্থনীতি যেহেতু একটি শাস্ত্র, সেইজন্য প্রথমেই অর্থনীতির প্রকৃতি (Nature and Scope of Economics) ও পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে।

অর্থনীতির সংজ্ঞা (Definition of Economics)

গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল ব্যবহৃত Oikonomia শব্দ থেকে Economics শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। বাংলাভাষায় এই শাস্ত্রকে বলা হয় ধনবিজ্ঞান বা অর্থবিজ্ঞান বা অর্থবিদ্যা বা অর্থনীতি। প্রাচীন ভারতেও অর্থনীতির আলোচনা ছিল, তার প্রমাণ “কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র “। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে প্রধান সংজ্ঞাগুলি আলোচনা করা হল।

অ্যাডাম স্মিথের সংজ্ঞা (Definition of Adam Smith)

আধুনিক অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথের মতে, অর্থনীতি হল সম্পদের বিজ্ঞান (Economics is the science of Wealth)। তাঁর মতে, সম্পদের উৎপত্তির কারণ এবং তার বণ্টন পদ্ধতিই হল অর্থনীতির মূল আলোচনার বিষয়। অ্যাডাম স্মিথের এই সংজ্ঞাকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হয়েছে।

প্রথমত, এই সংজ্ঞা খুবই বস্তুকেন্দ্রিক। কারণ এই সংজ্ঞায় সম্পদই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সম্পদ মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়। অথচ মানুষ ও তার আচরণ সম্পর্কে এই সংজ্ঞা থেকে কিছু জানা যায় না।

দ্বিতীয়ত, এই সংজ্ঞায় সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। শুধুমাত্র সম্পদ সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সম্পদ ব্যবহার বাড়লে মানুষের কল্যাণ বাড়ে। সুতরাং সম্পদ উপলক্ষ মাত্র। আসল লক্ষ্য হল মানুষের কল্যাণ বাড়ানো, কিন্তু এই সম্পর্কে সংজ্ঞাটিতে কোনো উল্লেখ নেই।

তৃতীয়ত, কোনো ব্যক্তি বা সমাজ যে সমস্ত অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, তার আলোচনা এই সংজ্ঞায় নেই এই সমস্ত কারণে এই সংজ্ঞাটি বহু চিন্তাবিদের কাছে অর্থনীতি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করেছিল। সেইজন্য অর্থনীতিকে বিষাদময় বিজ্ঞান, কুবেরের সুসমাচার ইত্যাদি বলে উপহাস করা হতো।

মার্শালের সংজ্ঞা (Definition of Marshall)

অর্থনীতি সম্পর্কে ভুল ধারণা দুর করার জন্য অধ্যাপক মার্শাল অর্থনীতির একটি আলাদা সংজ্ঞা দেন। সার্শালের মতে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যে অংশটুকুর সঙ্গে অর্থ উপার্জন ও উপার্জিত অর্থের ব্যয়ের সম্পর্কযুক্ত, তা নিয়ে আলোচনা করা যে শাস্ত্রের কাজ, তাকেই বলে অর্থনীতি। (Nature and Scope of Economics)

মার্শালের এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থনীতি হল সম্পদ এবং অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় হল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পর্যালোচনা করা। কিন্তু মার্শালের এই সংজ্ঞা অর্থনৈতিক কাজ কেন সংঘটিত হয় তার ব্যাখ্যা দিতে পারে না।

লায়নেল রবিন্স-এর সংজ্ঞা (Definition of Lionel Robbins)

মার্শালের সংজ্ঞার থেকে উন্নত একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন অধ্যাপক রবিন্স। রবিন্সের মতে অর্থনীতি হল এমন একটি বিজ্ঞান, যার কাজ হল, বিভিন্ন ব্যবহার আছে এমন ধরনের সীমাবদ্ধ উপকরণকে অসংখ্য উদ্দেশ্যসিদ্ধির কাজে কিভাবে লাগানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা।

কেয়ার্নক্রস-এর সংজ্ঞা (Definition of Cairncross )

অধ্যাপক কেয়ার্নক্রসের মতে অধ্যাপক রবিন্স অর্থনীতির সামাজিক চরিত্র বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তির অর্থনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণ করেছেন। তাই কেয়ার্নক্রস অর্থনীতির নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর মতে, অর্থনীতি হল একটি সমাজবিজ্ঞান এবং অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় হল, মানুষ কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যমে তার অভাব ও সীমিত উপকরণের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধন করে সেটি ব্যাখ্যা করা।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতির সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা ঠিক করা কঠিন। অর্থনীতি যেহেতু একটি গতিশীল বিষয়, তাই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন সংজ্ঞার প্রয়োজন হয়। এই গতিশীলতাই অর্থনীতির বিষয়বস্তু ও পরিধির পরিবর্তন ঘটায়।

Leave a Comment