Presentation of Statistical Data
রাশিতথ্য সংগ্রহের প্রসংগ্রহ করা রাশিতথ্যগুলিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সাজিয়ে সেগুলিকে উপস্থাপন করার প্রয়োজন হয় (Presentation of Statistical Data)। সংগ্রহ করা রাশিতথ্যকে তিনটি উপায়ে উপস্থাপন করা যায়। অর্থাৎ রাশিতথ্য উপস্থাপনের তিনটি পদ্ধতি আছে।
(১) বিবরণের মাধ্যমে উপস্থাপন বা বর্ণনাত্মক উপস্থাপন (Textual Presentation)।
(২) ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন বা ছক বিন্যাসের সাহায্যে উপস্থাপন (Tabular Presentation)।
(৩) লেখাবলী ও চিত্রাবলীর সাহায্যে উপস্থাপন (Graphical Presentation)।
রাশিতথ্য উপস্থাপনের এই তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল:-
বিবরণের মাধ্যমে উপস্থাপন বা বর্ণনাত্মক উপস্থাপন (Textual Presentation) : সংগ্রহ করা রাশিতথ্যকে এই পদ্ধতিতে বিবরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। সাহিত্যরসিক পাঠকের কাছে বিবরণের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপনের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। তাছাড়া এই পদ্ধতির সুবিধা হল, যে কোনো সাধারণ ব্যক্তি বিবরণের মাধ্যমে রাশিতথ্য উপস্থাপন করতে পারে এবং একজন সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে এটি বোঝা সম্ভব হয়। কিন্তু বিবরণের মাধ্যমে রাশিতথ্য উপস্থাপনে পদ্ধতির বেশ কিছু অসুবিধা আছে। অসুবিধাগুলি হল :-
(১) অনেক বড় রাশিতথ্য এই পদ্ধতিতে প্রকাশ করলে পাঠক দীর্ঘ বিবরণ পড়তে পড়তে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে এবং বিবরণে দেওয়া রাশিতথ্য মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
(২) তুলনামূলক বিবরণের সময় একই তথ্য বারবার উল্লেখ থাকায় পাঠকের বিরক্তি সৃষ্টি হয়।
(৩) এই পদ্ধতিতে সংগ্রহকারীর পক্ষে রাশিতথ্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়।
(৪) এই পদ্ধতির অনুসন্ধানকারীর পক্ষে তার নিজস্ব মত দ্বারা পাঠককে প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্ত অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আইনসভায় বা কোম্পানির বাৎসরিক সভায় এই পদ্ধতির মাধ্যমে রাশিতথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বিবরণের মাধ্যমে রাশিতথ্য উপস্থাপনের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:-
উদাহরণ ১. “1960-61 সালে কলকাতা ও বোম্বাই সমুদ্র বন্দরে 24,221,581 মেট্রিক টন দ্রব্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এর মধ্যে কলকাতা সমুদ্র বন্দরে আমদানি-রপ্তানি হয় মোট 2,947,355 মেট্রিকটন, যার মধ্যে আমদানি 2,422,158 মেট্রিক টন। এর সাপেক্ষে বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল 6,553,159 মেট্রিক টন, যার মধ্যে আমদানি 4,008,606 মেট্রিক টন। অপরপক্ষে বোম্বাই সমুদ্র বন্দরে মোট সামুদ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল 3,233,921 মেট্রিক টন, যার মধ্যে আমদানি 1,222,833 মেট্রিক টন, এর সাপেক্ষে বৈদেশিক বাণিজ্য 11,487,146 মেট্রিক টন যার মধ্যে আবার আমদানি 9,572,260 মেট্রিক টন।”
উদাহরণ ২. “শুধু 2003 সালে সারা পৃথিবীতে নতুন করে HIV রোগের শিকার হয়েছে 4.8 মিলিয়ন লোক। এই সংখ্যা এর আগের যে কোনো বৎসরের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে। আজ বিশ্বের 37.8 মিলিয়ন। লোক HIV রোগ নিয়ে বেঁচে রয়েছে এবং 1981 সাল থেকে আজ পর্যন্ত 20 মিলিয়ন লোক AIDS রোগে মৃত্যুর শিকার হয়েছে। শুধু 2003 সালেই HIV রোগে মৃত্যুর সংখ্যা 2.9 মিলিয়ন।”
ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন বা ছক বিন্যাসের সাহায্যে উপস্থাপন (Tabular Presen- tation or Tabulation of Data: Different Parts of a Table) : সংগ্রহ করা রাশিতথ্যকে একটি ছকের উপর থেকে নীচে এবং বামদিক থেকে ডানদিকে সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে সাজানোকেই বলা হয় ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন বা ছক বিন্যাস (Tabular Presentation) অর্থাৎ সংগ্রহ করা রাশিতথ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে সারি (Row) ও স্তম্ভে (Column) সাজানোকেই বলা যায় ছক বিন্যাস।
ছকের বিভিন্ন অংশ (Different Parts of a Table) : ছক গঠনের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম না থাকলেও একটি ছকে নিচের অংশগুলো থাকে:-
(ক) ছকের নম্বব (Table Number) : ছকের একেবারে শীর্ষে ছকের শনাক্তকরণ ও ভবিষ্যতে সহজে নির্দেশনার জন্য ছকের যথাযথ নম্বর থাকে।
(খ) শিরোনাম (Title) : ছকের উপরে একটি শিরোনাম থাকে যেখানে ছকের মধ্যে কি আছে তার সংক্ষিপ্ত ও সরল বর্ণনা থাকে।
(গ) ছকের বামপাশের বিবরণলিপি বা সারিশীর্ষ (Stubs) : ছকের একেবারে বামদিকে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়ার যে স্তম্ভ থাকে তাকে বামপাশের বিবরণ লিপি বা সারিশীর্ষ বলে।
(ঘ) ছকের উপরিভাগের বিবরণ লিপি বা স্তম্ভ শীর্ষ (Caption) : বামপাশের বিবরণ লিপির শিরোনাম ছাড়া অবশিষ্ট স্তম্ভগুলির ওপর যে শিরোনাম থাকে তাকে ছকের উপরিভাগের বিবরণ লিপি বা স্তম্ভ শীর্ষ বলে। এই অংশে পরিমাপের এককও থাকে।
(ঙ) মূল অংশ (Body) : ছকের বামপাশের বিবরণ লিপি ও উপরিভাগের বিবরণ লিপি ছাড়া অর্থাৎ সারিশীর্ষ ও স্তম্ভশীর্ষ ছাড়া ছকের বাকী অংশকে বলে ছকের মূল অংশ অর্থাৎ সারিশীর্ষ ও স্তম্ভশীর্ষের মধ্যের অংশই হল ছকের মূল অংশ যার মধ্যেই রাশিতথ্যগুলি থাকে।
(চ) পাদ নির্দেশনা (Foot Note) : ছকের ঠিক নিচে থাকে পাদ নির্দেশনা। এটি ছকের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কে ব্যাখ্যার জন্য (যদি থাকে) ব্যবহার করা হয়।
(ছ) উৎস (Source) : ছকের নিচে থাকে উৎস। এটি রাশিতথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তার উল্লেখ থাকে।