Scope of Statistics Relation
রাশিবিজ্ঞানের গুরুত্ব ও পরিধি । রাশিবিজ্ঞানের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক (Impor-tance and Scope of Statistics Relation of Statistics with other Subjects) : বর্তমান সভ্যতার পরিসংখ্যান বা রাশিবিজ্ঞান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গেই নিবিড়ভাবে যুক্ত (Scope of Statistics Relation)। বর্তমানে অর্থনীতি, জীববিজ্ঞান, দর্শন, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ ব্যাপক। শুধু তাই নয় চিকিৎসাশাস্ত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং, এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ ঘটছে। এছাড়া সমস্ত ধরনের গবেষণায় রাশিবিজ্ঞানের ব্যবহার ঘটে চলেছে। তাই বলা যায় মানব উন্নয়নের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই রাশিবিজ্ঞনের প্রয়োগ ঘটছে। এইজন্যই বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ ফিশার (R.A. Fisher) বলেছেন রাশিবিজ্ঞান হল বিংশ শতাব্দীর মূল প্রয়োগবিদ্যা।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে বা শাস্ত্রে রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ বা উপযোগিতা আলোচনা করা হল :-
১। অর্থনীতিতে রাশিবিজ্ঞান (Statistics in Economics) : অর্থনীতি ও রাশিবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়। অর্থনীতির প্রতিষ্ঠিত সূত্রগুলির সত্যতা যাচাই করতে এবং অর্থনীতিতে আবিষ্কৃত নতুন নতুন তত্ত্বের সত্যতা যাচাই করতে রাশিবিজ্ঞানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়। অর্থনীতির বিভিন্ন তত্ত্ব এবং সূত্র বাস্তবে কি পরিমাণে গ্রহণযোগ্য সেটি বিচার করার অপরিহার্য হাতিয়ার হল রাশিবিজ্ঞান। বর্তমানে অর্থনীতি, গণিত এবং রাশিবিজ্ঞানের সাহায্যে বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয়ের অবতারণা করছে। যেমন গণিত, রাশিবিজ্ঞান ও অর্থনীতির সমন্বয়ে বিজ্ঞানের নতুন বিষয় Econometrics-এর জন্ম হয়েছে। তাই বলা যায় অর্থনীতির বর্তমান তত্ত্বের সত্যতা যাচাই ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এবং ভবিষ্যতের নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারের হাতিয়ার হিসাবে অর্থনীতিতে রাশিবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
২। ব্যবসা ও বাণিজ্যে রাশিবিজ্ঞান (Statistics in Business and Commerce) : আধুনিককালে শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের ফলে শিল্পের আয়তন যেমন বাড়ছে তেমনি আবার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের উৎপাদিত দ্রব্য বিশ্বের বাজারে বিক্রি করছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলি বর্তমানে যেমন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে তেমনি ভবিষ্যতও হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। বর্তমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভর হয়ে পড়েছে রাশিবিজ্ঞানের উপর। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য হিসাবনিকাশ ও প্রত্যাশার উপর মূলত নির্ভরশীল। একটি প্রতিষ্ঠান দ্রব্য উৎপাদন করে থাকে বাজারে সম্ভাব্য চাহিদার ভিত্তিতে, ফলে এই ব্যাপারে পূর্বানুমান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই পূর্বানুমান সঠিক হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা আসে। এই ব্যাপারে সঠিক পথের সন্ধান দেয় রাশিবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি। তাই বলা যায় বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহায্যকারী উপাদন হিসাবে কাজ করে রাশিবিজ্ঞান।
৩। রাশিবিজ্ঞান ও গণিত (Statistics and Mathematics) : রাশিবিজ্ঞান যেহেতু রাশিতথ্যের সাহায্যে আলোচনা করে থাকে তাই রাশিবিজ্ঞানের উন্নয়ন বহুলাংশে গণিতের উপর নির্ভর করে থাকে। সেইজন্যই রাশিবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হল প্রথমেই গণিতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণার। গণিতকে কাজ হিসাবে ধরলে রাশিবিজ্ঞান হল তার ফল। অনেকে আবার রাশিবিজ্ঞানকে গণিতের একটি অংশ হিসাবে চিন্তা করেন। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ক্যানন (Cannon) বলেছেন, রাশিবিজ্ঞান হল ব্যবহারিক বা ফলিত গণিতের (Applicd Mathematics) একটি শাখা যেটি রাশিতথ্যে বিশেষায়িত।
রাশিবিজ্ঞান এবং গণিত উভয়ই পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হলেও এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি হল গণিতে রাশিসমূহের মধ্যে যে সম্বন্ধ থাকে সেটি যে কোনো সংখ্যা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সত্য হলেও রাশিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটি পর্যাপ্ত নয়। রাশিবিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণের সংখ্যা যত বেশি হয় রাশি সমূহের মধ্যে সম্পর্ক তত সঠিক হয়।
৪। বিজ্ঞানে রাশিবিজ্ঞান (Statistics in the Science) : সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রাশিবিজ্ঞানের ব্যবহার বাড়ছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন সূত্রের ব্যাখ্যা এবং বাস্তবে সেটি কি পরিমাণে উপযোগী সেটি বিচার করার জন্য রাশিবিজ্ঞানের কোনো না কোনো পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়। এছাড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার যে গবেষণার ক্ষেত্র আছে সেগুলিতেও রাশিবিজ্ঞান অপরিহার্য।
রাশিবিজ্ঞান বা পরিসংখ্যান শাস্ত্রের ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা : অপপ্রয়োগ (Limitations of Statistics : Misuses of Statistics) : রাশিবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা বিষয়কে সাহায্য করলেও সমস্ত বিষয়ে বা সমস্ত ধরনের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা যায় না। এইজন্যই রাশিবিজ্ঞান বর্তমানে জনপ্রিয় বিষয় হলেও এর কিছু ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হয়। সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি হল :-
(১) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না : রাশিবিজ্ঞানে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের অর্থাৎ একটি বস্তু বা একজন ব্যক্তি বা একটি ঘটনার বিষয়বস্তু আলোচনা করা সম্ভব নয়। রাশিবিজ্ঞান কেবলমাত্র সমষ্টির বিষয় আলোচনা করে।
(২) গুণগত তথ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না রাশিবিজ্ঞান গুণগত তথ্য (Qualitative Phenomena) যেমন সততা, সৌন্দর্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। রাশিবিজ্ঞান মূলত পরিমাণগত রাশিতথ্য পর্যালোচনা করতে পারে।
(৩) গড় মানের (Average) উপর প্রতিষ্ঠিত : রাশিবিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত মূলত গড় মানের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই কারণে রাশিবিজ্ঞানে যে মান নির্ধারণ করা হয় সেটি সম্পূর্ণ সঠিক না হয়ে প্রায় সঠিক হয়ে থাকে।
(৪) অপব্যবহারের সম্ভাবনা : রাশিবিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিই রাশিবিজ্ঞান ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে কোনো ব্যক্তি রাশিবিজ্ঞানের অপব্যবহার ঘটিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। তাই বলা হয় রাশিবিজ্ঞান হল কাদামাটি (Clay) যা দিয়ে একজন মানুষ তার পছন্দমত শয়তান তৈরি করতে পারে বা ভগবান তৈরি করতে পারে। বাস্তবে রাশিবিজ্ঞানের অপব্যবহার রাশিবিজ্ঞান সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এই প্রসঙ্গে Disraeli-এর বক্তব্য হল “there are three kind of lies-lies, damened lies and statistics.” রাশিবিজ্ঞানের এই সমস্ত সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও বিষয়টির ক্রমবর্ধমান প্রয়োগ অতি অবশ্যই। স্বীকার করতে হয়। তাই W. L. King মন্তব্য করেছেন “Statistics is a most useful servant but only of great value to those who understand its proper use.”