Working of Price Mechanism
বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবার (Working of Price Mechanism) এবং উৎপাদনের উপাদানসমূহের (Factors of production) দাম নির্ধারিত হয়ে যে ব্যবস্থার উদ্ভব হয়, তাকে বলে দামব্যবস্থা। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধান করে সম্পদসমূহের বণ্টনের ব্যবস্থা করে দামব্যবস্থা। দামব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে সম্পদসমূহ বণ্টন হয়, তা আলোচনা করা হচ্ছে।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কী পরিমাণে এবং কী কী উৎপাদন করতে হবে, তা স্থির করতে হলে প্রধানত নির্ধারণ করতে হয় ক্রেতাদের অসংখ্য অভাবের মধ্যে কোন্গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং তার কতখানি পূরণ করা দরকার। ক্রেতারা কোন দ্রব্যকে কী পরিমাণ গুরুত্ব দিচ্ছে তা প্রকাশ পায় দ্রব্যটির জন্য ক্রেতারা কি পরিমাণ দাম দিতে রাজি আছে তার উপর। যে দ্রব্যের জন্য ক্রেতারা বেশি দাম দিতে রাজি থাকে সেই দ্রব্য ক্রেতাদের কাছে বেশি পছন্দের। অপরপক্ষে যে দ্রব্যের জন্য ক্রেতারা কম দাম দিতে রাজি থাকে, সেই দ্রব্য ক্রেতাদের কাছে কম পছন্দের। এইভাবে বিভিন্ন দ্রব্যের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে কি পরিমাণে, তা দামব্যবস্থার মাধ্যমে জানা যায় এবং উৎপাদকরা ক্রেতাদের চাহিদা মতো দ্রব্য উৎপাদন করে থাকে৷ কী দ্রব্য এবং কী পরিমাণে উৎপাদন করতে হবে তা স্থির হলে, কীভাবে বা কী উপায়ে ওই সমস্ত দ্রব্যগুলি উৎপাদন করা হবে, তা ঠিক করতে হয়।
অর্থাৎ উৎপাদন পদ্ধতি ঠিক করতে হয়। কোন উৎপাদন পদ্ধতি উৎপাদকরা গ্রহণ করবে তা ঠিক করতেও দামব্যবস্থার ভূমিকা আছে। যখন কোনো দ্রব্য উৎপাদনের অনেকগুলো উৎপাদন পদ্ধতি থাকে, তখন উৎপাদক সেই পদ্ধতি গ্রহণ করবে যাতে উৎপাদন বায় সবচেয়ে কম হয়। সুতরাং উৎপাদক উৎপাদন ব্যয় কমাবার জন্য যে উপাদানের দাম বেশি, তার ব্যবহার কমিয়ে যে উপদানের দাম কম তা বেশি পরিমাণ ব্যবহার করবে। উপদানগুলি কি অনুপাতে ব্যবহার করলে উৎপাদন বয় সর্বাপেক্ষা কম হবে, তা নির্ভর করে উপাদানগুলির দামের উপর। এইভাবে দামব্যবস্থার মাধ্যমে সার্থক উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহারের প্রবণতা থাকে।
আবার দামব্যবস্থার মাধ্যমে উপাদানের নিয়োগ বিন্যাস ঘটে থাকে। যেমন, যে সমস্ত ফার্ম বেশি মুনাফা অর্জন করে, তারা বেশি দাম দিয়ে উপাদান কিনতে পারে। কিন্তু যে সমস্ত ফার্মের মুনাফা কম বা ক্ষতি হয়, তারা বেশি দাম দিয়ে উপাদান কিনতে পারে না। উপাসদের মালিকরাও সবসময় চেষ্টা করে তাদের উপাদান বেশি দামে বিক্রি করতে। ফলে উপাদানগুলো কম মুনাফা অর্জনকারী ফার্মের কাছ থেকে বেশি মুনাফা অর্জনকারী ফার্মের কাছে নিযুক্ত হয়। এইভাবে দামব্যবস্থার মাধ্যমে উপাদানের সঠিক বিন্যাস ঘটে থাকে।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কী কী দ্রব্য, কী পরিমাণে উৎপাদন করতে হবে এবং ঐ দ্রব্যগুলি উৎপাদনের জন্য কোন্ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, তা স্থির হওয়ার পর দ্রব্যসামগ্রীর বণ্টন কীভাবে হবে তাও স্থির করে দেয়। দামব্যবস্থা। উৎপাদিত দ্রব্যের বণ্টন মূলত নির্ভর করে ব্যক্তিগত আয়ের বণ্টনের উপর। যেমন, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কোনো দ্রব্যের যোগান যদি কম থাকে, তাহলে সেই সীমাবদ্ধ যোগানকে ক্রেতাদের মধ্যে বণ্টনের দায়িত্ব নেয় দামব্যবস্থা। দ্রব্যের যোগানে ঘাটতি থাকলে সাধারণভাবে দাম বাড়ে, ফলে সকল ক্রেতারই চাহিদার পরিমাণ কিছুটা কমে। দাম সেই পর্যন্ত বড়তে থাকে, যে দামে প্রব্যের চাহিদা ও যোগান সমান হয়।
সুতরাং ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মতে এই দামব্যবস্থা অর্থনীতির কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সম্পদসমূহ দক্ষতার সাথে বণ্টন করে থাকে। এই দামব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য স্থাপিত হয় এবং সেটি বজায় থাকে। ক্রেতারা সর্বনিম্ন দামে এব্য ও সেবা পেয়ে থাকে, উপাদানের মালিক উপাদানগুলির সঠিক দাম (খাজনা, মজুরি, সুদ ইত্যাদি) পেয়ে উৎপাদকরা স্বাভাবিক মুনাফা পেয়ে থাকে। এইভাবে এক অদৃশ্য হাত (an invisible hand), অর্থাৎ দামব্যবস্থা অর্থনীতির কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সম্পদসমূহের যথাযথ বণ্টনের ব্যবস্থা করে। এই অদৃশ্য হাতের নীতি প্রথম ঘোষণ করেন অর্থনীতিশাস্ত্রের জনক অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)